প্রিন্ট এর তারিখঃ Nov 4, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Sep 27, 2025 ইং
হারিয়ে যাচ্ছে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর স্মৃতিচিহ্ন
    
উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর স্মৃতিচিহ্ন দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। গুণী এই ব্যক্তির স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই প্রশাসন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের।জানা যায়, কিংবদন্তি এই শিক্ষাবিদ টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার বর্তমান ভূঞাপুর উপজেলার বিরামদী গ্রামে ১৮৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শাবাজ খাঁ ও মায়ের নাম রতন খানম। ইবরাহীম খাঁ ১৯০৬ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ির পিংনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯১২ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করেন। সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ প্রথম মুসলমান ছাত্র, যিনি পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স (বর্তমান এসএসসি) পাশ করেন।
১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। পরে ১৯২৪ সালে আইনে স্নাতক পাস করেন। ব্রিটিশ ভারতে নিগৃহীত পণ্ডিতদের তিনি তার কলেজে সুযোগ দিতেন-এমনকি অন্যত্র বহিষ্কৃত ছাত্ররাও তার আশ্রয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে।ইব্রাহীম খাঁ ১৯১৯ সালে করটিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে করটিয়ার মানবদরদি শিক্ষানুরাগী জমিদার ওয়াজেদ আলী খাঁ পন্নীর অর্থায়নে করটিয়া সা’দত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে (১৯২০-১৯২২) সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইবরাহীম খাঁ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।১৯৪৬ সালে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য এবং ১৯৫৩ সালে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৪৮ সালে তিনি এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিগণের অনুরোধে ‘ভূঞাপুর কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর কলেজটি ‘ইবরাহীম খাঁ কলেজ’ নামকরণ করা হয়। তিনি ব্রিটিশ আমলে খান সাহেব ও খানবাহাদুর এবং পাকিস্তান আমলে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ উপাধি লাভ করেন। নাটকে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৭৬ সালে সাহিত্যে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের ২৯ মার্চ খ্যাতনামা এই শিক্ষাবিদ মৃত্যুবরণ করেন।
পাঠ্য বইয়ে আগে তার লেখা গল্প স্থান পেলেও এক দশকের অধিক সময় ধরে কোথাও কোনো পাঠ্য বইয়ে তাঁর লেখা কোনো উপন্যাস, গল্প স্থান পায়নি। ইবরাহীম খাঁ মুসলিম ঐতিহ্য চেতনায় উজ্জীবিত ছিলেন। যা তার লেখনী ও চিন্তা-চেতনায় সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
তাঁর লেখা শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে আনোয়ার পাশা (১৯৩৯), কামাল পাশা (১৯২৭), মানুষ ভিস্তি বাদশা, কাফেলা, ঋণ পরিশোধ (১৯৫৫), নিজাম ডাকাত, সোহরাব রোস্তম, গুল বাগিচা, শিয়াল পণ্ডিত, ব্যাঘ্র মামা (১৯৫১), বাদশা বাবর, বেদুঈনদের দেশ(১৯৫৬), সূর্যি মামার রং, আরব জাতি, বরফের দেশ, সিন্দাবাদ জাহাজী, আইনস্টাইন, বাবরের স্মৃতি, আলু বোখারা (১৯৬০), ইস্তামবুল যাত্রীর পত্র (১৯৫৪), নয়াচীনে এক চক্কর, পশ্চিম পাকিস্তানির পথে ঘাটে উল্লেখযোগ্য। ‘বাতায়ন’ তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থ এবং ‘একটি রূপায়নমান স্বপন’ ভূঞাপুরের ঐতিহাসিক দলিল। ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা ও জানা যায়, কলেজের শিক্ষার্থীরাই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাঁর জীবনী সম্পর্কে নেই কোনো ধারণাও নাই।
ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতা একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন, সেটা জানি, কিন্তু বিস্তারিত জানিনা। এ বিষয়ে ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান বলেন, পাঠ্যবইয়ে আবারও তাঁর লেখা ছাপা হলে আমরা খুশি হব। প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নামে সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর সাহায্যে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে তার সমাধির পাশেই ইবরাহীম খাঁ স্মৃতি পাঠাগারটি রক্ষণাবেক্ষণ করে ভূঞাপুর পৌরসভা। অব্যবস্থাপনায় ধীরে ধীরে সেটিও হারিয়ে যাচ্ছে।
 
    
       © সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃdailyprogotiralo.com